বৈরী পরিবেশে মাছের বেঁচে থাকার পেছনে মূল সহায়ক

একদল বিজ্ঞানী দাবি করছেন যে, আবহাওয়া পরিবর্তন কিংবা সমুদ্রের বিষাক্ত পানিতে মাছেদের টিকে থাকার পেছনে যে রহস্য তা তারা উদঘাটন করতে পেরেছেন। তাদের মতে, মাছেদের বিবর্তনীয় সাফল্য এবং বৈরী পরিবেশে তাদের খাপখাওয়ানোর ক্ষমতার প্রধান উৎস হলো “হিমোগ্লোবিন” নামক এক অণু। হিমোগ্লোবিন হলো একধরনের বাহক, যা মানুষসহ বিভিন্ন প্রানির মস্তিষ্ক, পেশিসহ অন্যান্য অঙ্গে অক্সিজেন পরিবহন করে।

বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী “সায়েন্স” তাদের সর্বশেষ সংস্করণে এমনি এক উদ্ভাবনের কথা প্রকাশ করেছে, যা আবিষ্কার করেছেন ARC Centre of Excellence for Coral Reef Studies এর ড.জডি রুমার এবং তার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা। ড. জডি তার কথায় বলেন, “৪০ কোটি বছর আগে সমুদ্র এখনকার মত ছিল না। তখন সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের পরিমান ছিল কম ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ছিল বেশি,ফলে তখন পানি ছিল অম্লীয়(acidic)।”


“এরপরও এধরনের বৈরী পরিবেশে মাছেরা কেবল বেঁচেই থাকতো না, তারা নিজ প্রজাতির উন্নতিও সাধন করতো। তাদের এরূপ বেঁচে থাকার পেছনে মূল সহায়ক ছিল রক্তে অবস্থিত হিমোগ্লোবিন, যা প্রতিকূল পরিবেশে দেহে প্রচুর পরিমান অক্সিজেনের সরবরাহ করতো।”

“হিমোগ্লোবিন মাছের ফুলকা থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, যেমন করে মানুষের ফুসফুস থেকেও। এরপর এটি পেশি, অঙ্গ, হৃৎপিণ্ডসহ সমগ্র দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে, যতক্ষণ না এটি এমন টিস্যুর সংস্পর্শে আসছে যা প্রচুর পরিমানে কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন করছে।”তার ভাষ্যমতে, “অম্ল(acid) এখানে একধরনের সংকেত হিসেবে কাজ করে, যার ফলে হিমোগ্লোবিন এসব টিস্যুতে যতটা সম্ভব অক্সিজেন ত্যাগ করে।”

“প্রাচীনকালের এসব মাছেরা এমন কোন পথ আবিষ্কার করেছিল যার ফলে সর্বাধিক পরিমান অক্সিজেন পরিবাহিত হতে পারে, এমনকি এমন পরিবেশে যখন তাদের বসবাসের পানিতেই অক্সিজেনের পরিমান ছিল কম। প্রয়োজনের সময় তাদের অক্সিজেন ত্যাগের ক্ষমতা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর; এটা তাদের বিবর্তনীয় সাফল্যের পেছনের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে বর্তমান পৃথিবীর অর্ধেক মেরুদণ্ডী প্রানিই তাদের থেকে আগত।”

মাছেদের অক্সিজেন ত্যাগের প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী হয় পরবর্তী ১৫-২৭ কোটি বছরের মধ্যে, যখন তাদের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেল, যেমন চোখ, যার প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন প্রয়োজন নিজকর্ম সম্পাদনে,দর্শনে সাহায্যকারী কোষের মৃত্যু ঠেকাতে এবং পানির নিচে পরিষ্কারভাবে দেখতে, শিকার করতে এবং শিকারি থেকে পালাতে, যা অত্যাবশ্যক।

“Rainbow trout (Oncorhynchus mykiss) মাছ প্রতিকূল পরিবেশে কিভাবে দ্রুত দেহের টিস্যুতে অক্সিজেন ত্যাগের পরিমান দিগুণ করে”- এ সম্পর্কিত এক পরীক্ষাই গবেষকদের তাদের এমন আবিষ্কারের পথে পরিচালিত করে। মাছের দেহের এই প্রক্রিয়া মানুষের থেকে অনেকবেশি কার্যকারী(যেহেতু বিবর্তনবাদ অনুযায়ী, মানুষের উভচর পূর্বপুরুষেরা ৩৫-৪০ কোটি বছর আগেই উন্নতশ্রেনির মাছেদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে), এই আবিষ্কার আমাদের আরো ভালভাবে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলায় দেহে অক্সিজেনের ভূমিকা নির্ধারণে সাহায্য করবে।

ড.রুমার বলেন,“এছাড়াও, আমাদের ধারণা আমরা যদি বুঝতে পারি পূর্বে কিভাবে মাছ নিম্ন-অক্সিজেন, অধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড সংবলিত অম্লীয় পানিতে জীবনধারণ করতো, তাহলে এটা আমাদের ধারণা দিবে কিভাবে তারা জলবায়ু পরিবর্তনে মানিয়ে নিতে পারে, মানুষ নিজেই যে ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।”

সূত্রঃ
• সায়েন্স অ্যালার্ট
• ‘Root Effect Haemoglobin May Have Evolved to Enhance
General Tissue Oxygen Delivery’ by Jodie L. Rummer, David J.
McKenzie, Alessio Innocenti, Claudiu T. Supuran and Colin J.
Brauner appears in the 14 June 2013 issue of the journal Science.

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট