, অবিভাজ্য
কণা দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ যেকোনো পদার্থকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সর্বশেষ যে
অবস্থা পাওয়া সম্ভব তাই পরমানু। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ভাঙ্গার
দৌড় পরমানু পর্যন্ত আটকে থেকে নেই। পরমানুকে ভেঙ্গে আমরা এর ভেতর থেকে বের
করে এনেছি ইলেক্ট্রন, নিউক্লি (Nuclei)। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা
ইলেক্ট্রন, নিউক্লিকেও ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন এবং আবিষ্কার করেছেন আরও
অসংখ্য অতিপারমানবিক কণার (Subatomic Particle)
অস্তিত্ব
। কিন্তু আগেকার সময়ের বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকরা পরমানুর মাধ্যমে
যেকোনো ধরণের পদার্থ সৃষ্টি হবার যে সরল কাঠামো (Framework) বের করে
ফেলেছিলেন, অতিপারমানবিক কণাগুলো আবিষ্কার করার পর সেটা করা প্রায় অসম্ভব
এবং ঝামেলার কাজ হয়ে দাঁড়ালো। নিউট্রিনোস, কোয়ার্কস, মেসন, লেপটনস,
হার্ডডন্স, গ্লুওনস, ডব্লিও-বোসন ইত্যাদি ইত্যাদি উদ্ভট নামের এবং ধর্মের
অতিপারমানিক কণার জঙ্গলই যে প্রকৃতির একেবারে মৌলিক পর্যায়ের অবস্থা সেটা
মেনে নেওয়াটা কষ্টকরই বটে।
মোটামুটি গ্রিকদের সময় থেকেই দার্শনিকদের ধারণা ছিলো সকল পদার্থ, পরামানু (Atom) নামক অতিক্ষুদ্র
পদার্থের গাঠনিক কাঠামো ব্যাখ্যা করার
কষ্টসাধ্য এই বিষয়টাকে অতিচমৎকার ও সরলভাবে উপস্থাপন করা যায় স্ট্রিং
তত্ত্ব (String theory) এবং এম তত্ত্ব (M-theory) দ্বারা। অতিপারমানবিক কণা
দ্বারা সকল ধরণের পদার্থ সর্বোপরী মহাবিশ্ব সৃষ্টিকে আসলে তুলনা করা যায়
ভায়োলিনের তার কিংবা ড্রামের মেমব্রেনের মাধ্যমে সুর সৃষ্টির সাথে। তবে
মনে রাখা দরকার, এগুলো সাধারণ তার কিংবা মেমব্রেনের মতো নয়, এদের অস্তিত্ব
দশ-এগারো মাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত।
ব্যাপারটাকে আরেকটু বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
পদার্থবিজ্ঞানীরা ইলেক্ট্রনকে গণ্য করেন অতিঅতিক্ষুদ্র একটি মৌলিক কণা
হিসেবে। যখন তারা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নতুন ধরণের কোনো অতিঅতিক্ষুদ্র কণার
সন্ধান পান তখন তার জন্য একটি নতুন নাম বরাদ্দ করেন। এরফলে বর্তমানে প্রায়
শ’খানেক মৌলিক কণা নিয়ে তাদের মাথা ঘামাতে হচ্ছে। এগুলোই উপরে বর্নিত
অতিপারমানবিক কণা। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্ব মতে, ইলেক্ট্রনের ভেতরটা যদি
সুপারমাইক্রোস্কোপ দ্বারা দেখা সম্ভবপর হতো তাহলে আমরা কোনো কণা দেখতাম না,
আমরা দেখতাম কম্পিত এক তার। এটাকে আমাদের কণা বলে মনে হয় কারণ আমাদের
যন্ত্রগুলো এতো সুক্ষ্ম পরিমাপ উপযোগী নয়।এই অতিক্ষুদ্র তারগুলোই আসলে ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্কে স্পন্দিত এবং অনুরণনিত হয়। আমরা যদি একটি অতিপারমানবিক কণার সুক্ষ্ম তারের কম্পনের হার পরিবর্তন করে দেই তাহলে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আরেকটি অতিপারমানবিক কণা সৃষ্টি হবে, ধরা যাক কোয়ার্ক। এখন সেটি যদি আবার পরিবর্তন করি তাহলে হয়তো পাওয়া যাবে নিউট্রিনো। সঙ্গীতে আমরা যেমন ভায়োলিন বা গিটারের তার কাঁপিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নোট সৃষ্টি করি, অতিপারমানবিক কণাগুলোও সেরকম ভিন্ন ভিন্ন নোট। সুতরাং অসংখ্য অতিপারমানবিক কণাগুলো শুধুমাত্র একটি বস্তু দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব, সেটা হলো স্ট্রিং বা তার!
স্ট্রিং তত্ত্ব আলোকে, হাজার বছর ধরে পদার্থবিজ্ঞানের যে নিয়মনীতিগুলো আমরা আবিষ্কার এবং লিপিবদ্ধ করেছি সেগুলো গিটার কিংবা ভায়োলিনের বিভিন্ন নোটের সমন্বয়ে সৃষ্ট প্রীতিকর সংমিশ্রন (Harmony)। রসায়নবিজ্ঞানকে বলা যেতে পারে সুর (Melody) আর পুরো মহাবিশ্ব সেক্ষেত্রে হবে লুদউইন ভ্যান বেইতোভেন কোনো সিম্ফোনি!!